উৎসবের গয়না: বাড়িতেই সহজে পরিষ্কার ও সংরক্ষণ করার উপায়


উৎসবের গয়না শুধু পড়লেই নয়। যত্ন নেওয়াটাও জরুরী। জেনে নিন কিভাবে বাড়িতেই সোনার রুপার ও কষ্টিউম গয়না সহজে পরিষ্কার ও সংরক্ষণ করবেন। এই ঘরোয়া টিপস গুলোতে থাকবে আপনার গয়নার জেল্লা অটুট রাখার উপায়।

উৎসবের-গয়না-বাড়িতেই-সহজে-পরিষ্কার-ও সংরক্ষণ-করার-উপায়

উৎসবের গয়না ঝকঝকে রাখতে জানুন সহজ ঘরোয়া উপায়। বাড়িতে করুন পরিষ্কার ও সুরক্ষিত সংরক্ষণ দীর্ঘদিন টেকাতে আপনার প্রিয় গয়না।

পোস্ট সূচিপত্রঃ উৎসবের গয়না পরিষ্কার করার উপায়

আলোচনায় যা থাকছে

ভূমিকাঃ গয়নার যত্ন কেন জরুরী

গয়না শুধু অলংকার নয়--এটা আমাদের আবেগ স্মৃতি আর ব্যক্তিত্বের প্রতীক. প্রতিটি গয়নার পেছনে থাকে কোন না কোন অনুভব ভালোবাসা বা জীবনের বিশেষ মুহূর্তের গল্প। হয়তো বিয়েতে পাওয়া একজোড়া কানের দুল, মায়ের দেওয়া হা্‌র, কিংবা কোন উৎসবে নিজের পছন্দে কেনা নাকফুল--সব গয়নারই আলাদা একটা মূল্য আছে, যা টাকার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

তবে সময়ের সাথে সাথে এই প্রিয় গয়না গুলোর উজ্জ্বলতা কমে যায়, ধুলো ময়লা জমে, কখনো রং ফিকে হয়ে যায় বা ভেঙ্গেও যেতে পারে। এইসব ঘটার মূল কারণ হলো যত্নের অভাব। যেমন ভাবে  ত্বক বা চুলের যত্ন না নিলে সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, ঠিক তেমনি গয়নাও নিয়মিত যত্ন না পেলে তার জেল্লা রং আর আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়।

আর ও একটি বড় কারণ হলো--আমরা অনেকেই গয়না পোরে রাখি। কিন্তু ব্যবহার শেষে তা পরিষ্কার না ঠিকভাবে সংরক্ষণ করি না। হলে ঘামের লবণ, পারফিউমের রাসায়নিক মেকাপের অবশিষ্টাংশ বা বাতাসের আদ্রতা ধীরে ধীরে গয়নার উপর প্রভাব ফেলে। এতে গয়না শুধু মলিন হয় না, বরং বরং দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতে পারে।

বিশেষ করে উৎসবের সময় আমরা যেভাবে গয়না পরি-মেকআপ হেয়ার স্প্রে পারফিউম ইত্যাদির সাথে মিশে যায় নানা উপাদান যা গয়নার ধাতু ও পাথরের উজ্জ্বলতায় প্রভাব ফেলে। তাই উৎসব শেষে গয়নাকে পরিষ্কার ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন, সোনার গয়না যদি সাবধানে না রাখা হয্‌, তবে তার রঙের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। রূপার গয়না আবার সহজেই কালচে দাগ পড়ে যায়, আর কষ্টিউম বা আর্টিফিশিয়াল গয়না সামান্য আর্দ্রতাতেই মরচে ধরে।

তাই গয়নার প্রতি যত্ন নেওয়া মানে শুধু তার সৌন্দর্য ধরে রাখা নয়, বরং সেই আবেগ সেই স্মৃতি সেই ভালোবাসাকেও অটুট রাখা। নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক সংরক্ষণের অভ্যাস করলে গয়না দীর্ঘদিন নতুনের মত থাকবে, আর প্রতিটি উৎসবে আপনাকে করে তুলবে আরও উজ্জল ও আত্মবিশ্বাসী।

গয়না ময়লা ও বিবর্ণ হওয়ার কারণ

গয়নার উজ্জ্বলতা হারিয়ে যাওয়া কোন একদিনের ঘটনা নয়, বরং ধীরে ধীরে ঘটে যাওয়া এক প্রক্রিয়া। আমরা যতই দামি বা মানসম্মত গয়না ব্যবহার করি না কেন, নিয়মিত যত্নের অভাবে সেটি সময়ের সঙ্গে তার প্রাকৃতিক জেল্লা হারিয়ে ফেলে। নিচে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন গয়না ময়লা বা বিভিন্ন হওয়ার প্রধান কিছু কারণ--

ঘাম ও ত্বকের তেল
আমাদের ত্বক থেকে ঘাম ও প্রাকৃতিক তেল বের হয়, যা গয়নার ধাতুর সাথে প্রতিক্রিয়া করে। বিশেষ করে গরম আবহাওয়া ঘামের লবণ গয়নার উপর জমে থেকে যায়। ফলে রং পরিবর্তন হয় এবং উজ্জ্বলতা কমে যা...

পারফিউম, ক্রিম ও মেকাপের রাসায়নিক প্রভাব
পারফিউম বডি লোশন বা ফাউন্ডেশনে থাকার রাসায়নিক উপাদান অনেক সময় গয়নার ধাতু বা পাথরের গঠন নষ্ট করে দেয়। এসব কেমিক্যাল গয়নার রং ফিকে করে দেয়, বিশেষত রুপা ও  কস্টিউম গয়নাতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

আর্দ্রতা ও বাতাসের সংস্পর্শ
যে ঘরে বা বাক্সে গয়না রাখা হয় সেখানে আর্দ্রতা বেশি থাকলে গয়না দ্রুত অক্সিডাইজ হয়ে যায়। বাতাসের অক্সিজেন ও আদ্রতার সংমিশ্রণে গয়নার উপরে এক ধরনের কালচে আবরণ পড়ে, যাকে আমরা সাধারণত "কালি ধরা" বলি

ভুল সংরক্ষণ পদ্ধতি
অনেকে একই বাক্সে সব গয়না একসাথে লিখে দেন--এতে ধাতব অংশে ঘষা লেগে আঁচড় পড়ে যায়, পাথর খুলে পড়ে বা রং উঠে যায় বিশেষ করে সোনার ও রুপার গয়না আলাদা কাপড়ে বা নরম বেগে না রাখলে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জল বা সাবান ব্যবহারের ভুল অভ্যাস
অনেকে গয়না পড়ে গোসল করেন বা হাত ধোয়ার সময় খুলে রাখেন না। এতে সাবান বা পানির খনিজ পদার্থ গয়নার গায়ে জমে থেকে যায় এবং রং বিবর্ণ করে দেয়। এমনকি কিছু গয়না(বিশেষ করে কস্টিউম জুয়েলারি) পানির সংস্পর্শে মরচে ধরেও যায়।

পরিবেশের ধুলো ও ময়লা
বাইরের ধুলাবালি বা ধোয়া গয়নার উপর সূক্ষ্ম স্তর তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে উজ্জলতা নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে উৎসবের ভিড়ভাট্টা ও আউটডোর অনুষ্ঠানে পড়ে গেলে গয়না দ্রুত মলিন হয়ে যায়।

অতিরিক্ত ব্যবহার বা আঘাত
একই গয়না প্রতিদিন পড়লে এবং কোন রুক্ষ্ন কাজ(যেমন রান্না বা পরিষ্কার) ছোটখাটো আঘাত, ঘষা বা চাপ গয়নার আকৃতি ও পাথরের মজবুতিতে প্রভাব ফেলে।

ভুল পরিষ্কার পদ্ধতি
অনেকে অজান্তেই কঠিন ব্রাশ, টুথপেস্ট বা ডিটারজেন্ট দিয়ে গয়না পরিষ্কার করেন--যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে গয়নার সূক্ষ্ম অংশ ঘষা লেগে আঁচড় পরে, পাথরের জেল্লা নষ্ট হয় এবং রং ফিকে হয়ে যায়।

উপসংহার(এই অংশের ছোট্ট সংযোগ)
গয়নার সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে আগে জানতে হবে কেন তা মলিন হয়। কারণ জানা থাকলে প্রতিরোধ করা যায় সহজে। তাই পরবর্তী অংশে আমরা জানবো "ঘরোয়া উপায়ে গয়না র ধাপে ধাপেপরিষ্কারে পদ্ধতি" যা তোমার উৎসবের গয়নাকে করে তুলবে একদম নতুনের মত ঝকঝকে!

গয়না পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায়(ধাপে ধাপে পদ্ধতি)

গয়না আমাদের সাজের এক অপরিহার্য অংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধুলো, ঘাম ও বাতাসের প্রভাব গয়ন মলিন হয়ে যায়। বিশেষ করে সোনা্‌র, রুপার বা কৃত্রিম গয়না গুলো। চিন্তা নেই! ঘরেই খুব সহজ উপায়ে তুমি গয়না ঝকঝকে করে তুলতে পারো--কোন দামি ক্লিনার ছাড়াই.

উৎসবের-গয়না-বাড়িতেই-সহজে-পরিষ্কার-ও সংরক্ষণ-করার-উপায়

 ধাপ ১ঃ প্রস্তুতি 
ডিস ওয়াস লিকুইড বা হালকা বেশি শ্যাম্পু মিশিয়ে নাও। ভালোভাবে ফেনা তৈরি হওয়া পর্যন্ত নাড়ো।

ধাপ ২; গয়না ভিজিয়ে রাখা
এবার গয়নাগুলো সেই পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখো। এতে ময়লা ও তেল জাতীয় আবরণ নরম হয়ে যাবে, যা সহজেই পরিষ্কার করা সম্ভব।

ধাপ ৩ঃ নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা
ভিজিয়ে রাখার পর একটা নরম টুথব্রাশ বা মেকআপ ব্রাশ দিয়ে গয়নার প্রতিটি অংশ ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার কর। বিশেষ করে, যেখানে নকশা বা পাথর বসানো আছে, সেখানে বেশি যত্ন নাও।

ধাপ ৪ঃ পরিস্কার পানি দিয়ে ধোঁয়া
, গয়না ব্রাশ করার পর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো। সাবানের কোন অংশ যেন লেগে না থাকে, তা ভালোভাবে খেয়াল করো।

ধাপ ৫ঃ শুকিয়ে নেওয়া
। এবার গয়নাগুলোকে নরম তুলার কাপড় বা মাইক্রো ফাইবার কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নাও। সরাসরি রোদে শুকিও না, এতে রং ফিকে হয়ে যেতে পারে।

ধাপ ৬ঃ চূড়ান্ত পালিশ(ঐচ্ছিক)
যদি গয়না ধাতব হয়(সোনা বা রুপা) তাহলে সামান্য ব্রেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে হালকা করে ঘষে নাও, এতে ঝকঝকে উজ্জ্বল ভাব ফিরে আসবে।

অতিরিক্ত টিপসঃ
  •  রুপার গয়না কালচে হলে টুথপেস্ট দিয়ে হালকা ঘষে নাও।
  • কৃত্রিম গয়নার জন্য অ্যালকোহল বা পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না, এতে রং উঠে যেতে পারে।
  • পাথর বসানো গয়না পরিষ্কার করার আগে খুব জোরে ব্রাশ করোনা, এতে পাথর ঢিলে হয়ে পড়তে পারে।

গয়না সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি

গয়না শুধু সাজগোজের অংশ নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক. একটি সুন্দর গয়না যেমন মুহূর্তেই সাজ সম্পন্ন করে তোলে, তেমনি  সঠিকভাবে যত্ন না নিলে সেটি খুব দ্রুত তার রং উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। তাই গয়না পরিষ্কার করার পাশাপাশি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গয়নার যত্নে সামান্য অবহেলা করলে তা কালকে হয়ে যেতে পারে, পাথর ঢিলে হয়ে পড়তে পারে, কিংবা চকচকে ভাব একেবারে হারিয়ে যায়। কিন্তু তুমি যদি কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চলো, তাহলে তোমার প্রিয় গয়নার বহু বছর পর্যন্ত নতুনের মত থাকবে।

গয়না রাখার সঠিক জায়গা বেছে নাও
গয়না কখনোই সরাসরি রোদে বা অতিরিক্ত আর্দ্র জায়গায় রাখা উচিত নয়। তাপ ও আর্দ্রতা ধাতুর রং নষ্ট করে দেয়।
  • সব সময় গয়না রাখ ঠান্ডা, শুকনো এবং বায়ু চলাচল যুক্ত স্থানে।
  • বাথরুম, রান্নাঘর বা জানালার পাশে রাখলে গয়না দ্রুত অক্সিডাইজড হয়ে যায়।
  • গয়নার বাক্স রাখো এমন স্থানে, যেখানে সূর্যের আলো পড়ে না।

আলাদা বক্স বা পাউচে গয়না রাখো
অনেকেই সব গয়না একসাথে এক বক্সে রাখেন--এটি বড় ভুল এতে গয়না গুলো একে অপরের সঙ্গে ঘষে দাগ পড়ে যায় বা পাথর খুলে যায়।
  • প্রতিটি গয়নার জন্য আলাদা পাউচ বা বক্স ব্যবহার কর।
  • সোনার, রুপার ও পোস্টটি ও কস্টিউম (কৃত্রিম) গয়না গুলো আলাদা রাখো।
  • নরম হেলভেট তুলা বা সিল্কের পাউচ ব্যবহার করলে স্ক্র্যাচ এড়ানোযায়।

সিলিকা জেল বা এ্যান্টি-। টার্নিশ স্ট্রিপ ব্যবহার কর
তুমি নিশ্চয়ই দেখেছো নতুন জুতোর বাক্সে বা ব্যাগে ছোট ছোট সাদা প্যাকেট থাকে--সেটিও সিলিকা জেল।
এটি বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে, ফলে গয়নার ধাতব বংশ মরচে ধরে না।
  • গয়নার বাক্সে ১-২ টি সিলিকা জেল প্যাক রেখে দাও।
  • প্রতি কয়েক মাস পর সেগুলো বদলে নাও যাতে কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।

নরম কাপড়ের গয়না মোড়ানো
গয়না রাখার আগে নরম তুলা বা মাইক্রো ফাইবার কাপড়ে মোড়ানো উচিত। এতে ধর্ষণ কমে, দাগ পড়ে না।
বিশেষ করে রুপার গয়নার ক্ষেত্রে এটি খুব কার্যকর।
  • মোড়ানোর কাপড় অবশ্যই পরিষ্কার ও শুষ্ক হতে হবে।
  • কখনোই পলিথিন ব্যাগে গয়না রাখনা, এতে ঘাম বা আর্দ্রতা জমে ক্ষতি হয়।।

নিয়মিত গয়না পরীক্ষা ও পরিষ্কার
সংরক্ষণ মানেই শুধু বাক্সে রেখে দেওয়া নয়। নিয়মিত বের করে একটু বাতাসে রাখলে ও হালকা করে মুছে নিলে আর্দ্রতা বা দাগ দ  জমে না।
  • প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর গয়না পরীক্ষা কর।
  • পাথর বা ক্লাসপ ঢিলে হলে সাথে সাথে ঠিক কর।
  • ধুলা জমলে তোলার কাপড়ে মুছে নাও, কখনোই ভিজে কাপড় ব্যবহার করো না।

রাসায়নিকের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখো।
পারফিউম, হেয়ারস্প্রে ডিটারজেন্ট বা লোশন--এসব কেমিক্যাল গয়নার জন্য ক্ষতিকর।
  • গয়না পরার আগে সব ধরনের প্রসাধানি ব্যবহার শেষ কর।
  • গয়না খোলার পরই পরিষ্কার করে রাখো যাতে ঘাম বা তেল লেগে না থাকে।
  • রুপা বা কস্টিউম জুয়েলারি পারফিউমের সংস্পর্শে এলেই রং বদলে যায়।

ভ্রমণের সময় গয়না বহনের যত্ন
ভ্রমণে গেলে গয়না রাখার পদ্ধতি ও একটু আলাদা যত্ন প্রয়োজন
  • ভ্রমণের জন্য ছোট্ট জুয়েলারি ট্রাভেল কেস ব্যবহার কর।
  • প্রতিটি গয়না আলাদা সেকশনে রাখো যাতে একে অপরের সঙ্গে , ঘষা না লাগে।
  • ব্যাগে গয়না রাখলে সেটি শক্তভাবে বন্ধ আছে কিনা দেখে না।

পুরনো গয়না পালিশ কর।
যেসব গয়না দীর্ঘদিন পরে ব্যবহার করা হয়নি, সেগুলো প্রতিবছর একবার পেশাদার ভাবে পালিশ করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে ধাতব উজ্জ্বলতা ফিরে আসে এবং  ক্ষয়রোধ হয়।

লেখকের টিপসঃ
আমি দেখেছি অনেকের গয়না বছরের পর বছর নতুনের মত থাকে শুধু ঠিকভাবে রাখার জন্য। আর কেউ কেউ মাত্র কয়েক মাসেই গয়না নষ্ট করে ফেলে, কারণ তারা একসাথে রাখেনা ধুলা জমতে দেয়।

তুমি যদি এই নিয়ম গুলো মেনে চলো, তাহলে তোমার প্রিয় উৎসবের গয়না গুলো থাকবে ঠিক নতুন এর মত--উজ্জ্বল দা ভিন আর আকর্ষণীয়!

সাধারণ ভুল ও গয়না ক্ষতির কারণ

গয়না শুধু আমাদের সাজের অংশ নয়,, এটি আমাদের অনুভূতি ও স্মৃতিরও প্রতীক। কিন্তু অনেক সময় অজান্তেই আমরা কিছু সাধারণ ভুল করি, যা ধীরে ধীরে প্রিয় গয়নার সৌন্দর্য স্থায়িত্ব নষ্ট করে ফেলে। নিচে এসব ভুল এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো--

কেমিক্যালের কেম  সংস্পর্শে আনা
অনেকেই সাজগোজের সময় প্রথমে গয়না পরে তারপর পারফিউম, বডি স্প্রে হেয়ার স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করেন। অথচ এগুলোর ভেতরে থাকা অ্যালকোহল ও রাসায়নিক উপাদান গয়নার ধাতব স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। বিশেষ করে সোনার প্রলেপযুক্ত বা এমিটেশন গয়না দ্রুত কালচে হয়ে যায়।

সমাধানঃ সবসময় সাজগোজের শেষে গয়না পড়ুন এবং পারফিউম সরাসরি গয়নায় লাগাবেন না।

পানি ও ঘামের সংস্পর্শ
গয়না পড়ে গোসল, রান্না বা কাপড় ধোয়ার অভ্যাস অনেকেরই থাকে। কিন্তু পানির ধাতব বিক্রিয়ার কারণে সোনা রুপা বা কৃত্রিম ধাতুতে দাগ পড়ে, উজ্জলতা কমে যায় এবং জং ধরার মতো অবস্থাও হয়।

সমাধানঃ পানি বা ঘাম লাগলে সঙ্গে সঙ্গে নরম কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে রাখুন।

পড়ার পর সঠিকভাবে না রাখা
অনেক সময় আমরা গয়না খুলে টেবিল বা বিছানায় রেখে দেই। এতে ধুলোবালি আর্দ্রতা বা ধর্ষণে গয়নার গঠন দুর্বল হয়ে যায়। পাথর বা স্টোন খুলে পড়ে যেতে পারে।

সমাধানঃ প্রতিটি গয়না আলাদা পাউচ বা নরম কাপড়ের মোড়ানো অবস্থায় গয়নার বাক্সে রাখুন।। সিলিকা জেল থাকলে আর্দ্রতা কমবে।

, ভারী কাজ করার সময় গয়না পড়ে থাকা
রান্না পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাপড় কাচা বাগান করার সময় থাকলে ধাতু ক্ষয় স্ক্যাচ পাথর ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে আঙ্গুলের আংটি ও ব্রেসলেট এ সময়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমাধানঃ  যেকোনো ভারী বা ঘর্ষণ যুক্ত কাজের আগে সব ধরনের গয়না খুলে ফেলুন।

দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোতে রাখা
সোনার গয়না তেমন ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও রূপা ও পাথরযুক্ত গয়না দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোয় থাকলে রং ফিকে হয়ে যায়।

সমাধানঃ ভয় নাই এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না, বিশেষ করে পাথর বা মুক্তার গয়না।

শেষ কথাঃ
গয়না যত সুন্দরই হোক না কেন, যত্ন না নিলে তা দ্রুত তার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। তাই গয়না ব্যবহারের সময় সচেতন থাকা, পরিষ্কার করা এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা আপনার স্টাইল ও আত্মবিশ্বাস-দুটোই বজায় রাখবে দীর্ঘদিন।

বিশেষ উৎসবে গয়না ব্যবহারের আগে ও পরে যত্ন

উৎসব মানেই সাজগোজ, আনন্দ আর নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা। আর এই সাজের সবচেয়ে উজ্জ্বল অংশ হলো গয়না। সোনার রুপার কিংবা কৃত্রিম--সব ধরনের বায়নায় উৎসবে আমাদের লুকে রাজকীয় সৌন্দর্য যোগ করে। অনেকেই  জানেন না উৎসবের আগে ও পরে গয়নার সঠিক যত্ন না নিলে এগুলোর সৌন্দর্য খুব দ্রুত হারিয়ে যায়। নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো গয়নার আগে ও পরে যত্ন নেওয়ার কার্যকর উপায়--
উৎসবের-গয়না-বাড়িতেই-সহজে-পরিষ্কার-ও সংরক্ষণ-করার-উপায়

উৎসবের আগে গয়নার যত্ন
১। পরিষ্কার ও পালিশ করা
উৎসব এর আগে গয়না ব্যবহারের পূর্বে পুরনো গয়নাগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। ধুলো ঘাম বা ত্বকের তেল জমে গয়নার উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়।
ঘরোয়া পদ্ধতিঃ হালকার গরম পানিতে কয়েক ফোটা তরল সাবান দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, তারপর নরম ব্রাশ দিয়ে আলতোভাবে ঘষে পরিষ্কার করুন।
সোনার গয়নাঃ কটন কাপড়ে মুছে শুকিয়ে নিন, চাইলে গয়নার দোকানে গিয়ে পেশাদার পালিশ করতে পারেন।

২। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিস্কার করুন
অনেক সময় পাথর যুক্ত গয়নাই স্টোন আলগা হয়ে যায় বা হুক ঢিলে হয়ে যায়। উৎসবের আগে গয়নাগুলো একবার ভালো করে পরীক্ষা করে নিন যাতে পরে পরে পড়ে গিয়ে হারানোর ঝুঁকি না থাকে।

৩। পোশাকের সঙ্গে গয়না মিলিয়ে প্রস্তুত রাখুন
উৎসবের দিনে তাড়াহুড়ায় অনেকেই গয়না খুঁজতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন। আগে থেকেই কোন পোশাকের সঙ্গে কোন গয়না মানাবে তা ঠিক করে আলাদা করে রাখুন। এতে সময়ও বাজবে এবং গয়না ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা।

উৎসব শেষে গয়নার যত্ন
১। পড়ার পরই পরিষ্কার করা
উৎসব শেষে গয়না খুলে রাখার আগে অবশ্যই পরিষ্কার করে নিন। ধাম পারফিউম বা মেকাপের রাসায়নিক গয়নায় জমি থেকে ক্ষতি করে।
পরিষ্কারের পর নরম কাপড়ের মুছে শুকিয়ে নিন।
ভিজে অবস্থায় গয়না কখনো বাসে রাখবেন না।

২। আলাদা করে সংরক্ষণ
সব গয়না একসঙ্গে না রেখে আলাদা পাউচ বা ছোট বাক্সে রাখুন। একটার সঙ্গে আরেকটা ঘষা খেলে স্ক্র্যাচ  পড়তে পারে। বিশেষ করে রূপার গয়না কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় রাখলে কালচে হয় না।

৩। আর্দ্রতা ও আলো থেকে দূরে রাখুন।
গয়না এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সূর্যের আলো বা অতিরিক্ত আর্দ্রতা নেই। আলমারির ভিতরে সিলিকা জেল বা শুকনো তুলা রাখলে আর্দ্রতা শোষণ করে এবং গয়না উজ্জ্বল থাকবে।।

৪। মাঝে মাঝে ব্যবহার করুন
যে গয়নাগুলো আপনি খুব কম পড়েন, সেগুলো মাঝে মাঝে বের করে পরিষ্কার করে বাতাসে রেখে দিন। এতে ভাদু ও পাথরের ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং দীর্ঘদিন নতুনের মত উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

শেষ কথাঃ
গয়না শুধু সাজ নয়, এটি আপনার স্টাইল, ভালোবাসা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। উৎসবের উজ্জ্বল দিনগুলোতে এই গয়না গুলো যেন আগের মতই দীপ্তি ছড়ায়, তাই একটু সচেতনতা ও যত্নই যথেষ্ট। মনে রাখবেন--

"আপনার গয়নার যত্নেই আপনার সৌন্দর্যের দীর্ঘস্থায়ী রূপ।"

উপসংহারঃ আপনার গয়নাই আপনার আত্মবিশ্বাস

গয়না কেবল ধাতু, পাথর বা যত্নের মিশ্রণ নয়--এটি একেক জন নারীর ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। প্রতিটি গয়নার পিছনে লুকিয়ে থাকে কোন না কোন স্মৃতি--কখনো প্রিয়জনের উপহার, কখনো জীবনের বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী। তাই গয়নার যত্ন নেওয়া মানে শুধু একটি জিনিস রক্ষা করা নয়, বরং নিজেকে এক অংশকে যত্নে রাখার মতোই মূল্যবান কাজ।

আমরা প্রায়ই দেখি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গয়নার রং উজ্জ্বলতা ও আবহাওয়া কিছুটা ঠ ফীকে হয়ে যায়। কিন্তু যত্নের অভাবে যদি একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার সাথে হারিয়ে যায় একটি মায়া, একটি অনুভূতি। তাই গয়নার যত্ন নিন ভালোবাসা দিয়ে--যেমন যত্ন নেন নিজের সৌন্দর্যের, নিজের আত্মবিশ্বাসের।

মনে রাখবেন
গয়না আপনার সাজ কে সম্পূর্ণ করেনা, বরং আপনার আত্মবিশ্বাসকেই জ্বলজ্বল করে তোলে আর ও বেশি। যত্নে রাখলে এই গয়না একদিন হবে আপনার জীবনের গল্পের অংশ--
একটি আয়না, যেখানে প্রতিফলিত হবে আপনার নিজের দীপ্তি।

Frequently Asked Quenstion (FAQ)


১। প্রশ্নঃ গয়না কত দিন পর পর পরিষ্কার করা উচিত?

উত্তরঃ অন্তত মাসে একবার ঘরোয়া পদ্ধতিতে গয়না পরিষ্কার করলে তার উজ্জ্বলতা বজায় থাকে এবং ধুলো ময়লা জমে না।

২। প্রশ্নঃ পারফিউম ব্যবহারের আগে না পরে গয়না পরা উচিত?

উত্তরঃ সব সময় পারফিউম ব্যবহার শেষে গয়না পড়া উচিত। এতে রাসায়নিক গয়নাই লেগে তার রং ও চকচকে ভাব নষ্ট হয় না।

৩। প্রশ্নঃ রুপার গয়না কালচে হয়ে গেলে কিভাবে ঠিক করা যায়?

উত্তরঃ অল্প বেকিং সোডা ও লেবুর রস মিশিয়ে আলতোভাবে ঘষে পরিষ্কার করুন, তারপর শুকনো কাপড়ে মুছে ফেলুন।

৪। প্রশ্নঃ গয়না সংরক্ষণের জন্য কেমন বাক্স ভালো/

উত্তর; নরম কাপড় লাগানো আলাদা আলাদা ঘর বিশিষ্ট গয়নার বাক্স ব্যবহার করুন, যাতে এক গয়না আরেকটির সঙ্গে ঘষা না খায়।

৫। প্রশ্নঃ কৃত্রিম গয়না কিভাবে দীর্ঘদিন নতুনের মতো রাখা যায়?

উত্তরঃ ঘাম বা পানি লাগার পর ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে রাখুন এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন। মাঝে মাঝে শুকনো তুলা দিয়ে পরিষ্কার করুন।

Call to Action( CTA)

আপনি যদি গয়নার প্রেমই হন এবং চান আপনার গয়না সবসময় উজ্জ্বল ও ঝলমলে থাকুক, তাহলে আজই শুরু করুন যত্ন নেওয়া।
নিজের গয়না গুলো একটু সময় নিয়ে পরিষ্কার করুন, সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন--দেখবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস ও সৌন্দর্য দুটোই আর ও ঝলমলে হয়ে উঠেছে।

আর ও জানতে উইকিপিডিয়া লিংক দেখুন; বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গয়না

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%90%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%80_%E0%A6%97%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8%E0%A6%BE


নিচে কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন--
আপনি কিভাবে নিজের প্রিয় গয়নার যত্ন নেন?
আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদেরও সাহায্য করবে।

লেখকের মন্তব্য

ময়না আমার কাছে শুধু সাজ নয়, বরং মায়া শিল্পী আর আত্মবিশ্বাস এর প্রতীক। প্রতিটি গয়না   একেকটি গল্প বলে--কখনো ভালোবাসার কখনো প্রাপ্তির কখনো আবার নিজের প্রতি যত্নের।
আমি বিশ্বাস করি, যেভাবে আমরা নিজের যত্ন নেই ঠিক সেভাবেই আমাদের প্রিয় জিনিসগুলো কেও যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ--
" যে গয়না আপনি ভালোবাসা দিয়ে রাখেন, সেটি একদিন আপনার জীবনের সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।"

প্রতিটি আঙ্গুলের আংটি, প্রতিটি কানের দু্‌ল, প্রতিটি হাড়--যেন বলে যাই জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলো।

আমি এখনো মনে করি প্রথম গয়নাটা যেদিন মা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন-সেটি শুধু একটি অলংকার ছিল না, বরং সেই মুহূর্তটা ছিল মায়ের ভালোবাসার ছোঁয়া, যা আজও আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে ।
গয়না তাই আমার কাছে স্মৃতির প্রতীক, সম্পর্কের বাঁধন, আর আত্মবিশ্বাসের উৎস।

আমরা যখন এই গয়নাগুলো যত্নে  রাখি, তখন আসলে নিজের জীবনের গল্প গুলোই সংরক্ষণ করি।

যেমন একটি পুরনো চুরিতে বয়ে যায় শৈশবের হাসি, একটি হার মনে করিয়ে দেয় জীবনের বিশেষ দিন। একটি আংটি জাগিয়ে তোলে ভালোবাসার উষ্ণতা--এই ছোট ছোট গয়নাগুলোই আমাদের জীবনের সুখের অধ্যায়গুলোকে ধরে রাখে।

তাই বন্ধু মনে রাখবেন--গয়নার যত্ন নেওয়া মানে শুধু একটি বস্তু রক্ষা নয়, বরং নিজের আত্মমর্যাদা, স্মৃতি ও ভালোবাসাকে যত্নে রাখার মতোই পবিত্র কাজ।

প্রতিবার গয়না পড়ে যখন আপনি আয়নায় তাকান, তখন শুধু উজ্জ্বল ধাতু নয্‌, আপনার নিজের অভাকেই দেখতে পান।

আপনার হাসি, আপনার আত্মবিশ্বা্‌স, আপনার সৌন্দর্য--সবকিছু মিলিয়ে আপনিই এক অপূর্ব রত্ন।

গয়না ঝলমলে রাখুন, কিন্তু ভুলে যাবেন না--
আপনি নিজেই সবচেয়ে সুন্দর অলংকার। 
আপনার আত্মবিশ্বাসই আপনার আসল সৌন্দর্য, আর সেই আলো কখন নিভে যেতে দেবেন না।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url